সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
প্রকৃতির নিয়মেই সারাদেশে বাড়ছে শীতের দাপট। পঞ্জিকার পাতায় শীত আসতে আরো দুই সপ্তাহ বাকি থাকলেও এর মধ্যে পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৯ ডিগ্রিতে। দেশের অসহায়, গরিব আর প্রান্তিক মানুষদের শীতে যাতে থরথর কাঁপতে না হয়, সেজন্য ‘সংযোগ : কানেক্টিং পিপল’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করেছে শীতবস্ত্র ব্যাংক। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে মানুষ সেখানে শীতবস্ত্র পাঠিয়ে দিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টস ব্যাবসায়ী থেকে শুরু করে ইউরোপীয় বিখ্যাত ফ্যাশন ব্রান্ড লিন্ডেক্স বাংলাদেশের শীতার্ত মানুষের জন্য শীতবস্ত্র ব্যাংকে শীতের কাপড় দিচ্ছে। সংযোগের এ উদ্যোগে শীতবস্ত্র নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের নাভানা গ্রুপও। অনেকে অর্থ সহায়তাও পাঠাচ্ছেন। যা দিয়ে সিরাজেগঞ্জের ডু সামথিং ফাউন্ডেশনের কারখানায় তৈরি হচ্ছে স্বল্পমূল্যের বিশেষায়িত কম্বল। এই কম্বল আর শীতবস্ত্র পৌঁছে যাচ্ছে পঞ্চগড় থেকে সিরাজগঞ্জ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দিনাজপুর। রংপুরের ডিমলা থেকে বান্দরবনের বম উপজাতিদের মাঝে।
দূর্যোগ পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (বুয়েট) একদল সাবেক শিক্ষার্থীসহ আর বিভিন্ন পেশার কিছু তরুণের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে ‘সংযোগ: কানেক্টিং পিপল’ নামের সংগঠনটি। সংযোগের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনটি নানা ভাবে করোনা, আম্ফানসহ নানা দুর্যোগ ও বিপদে মানুষের পাশে থাকার ব্রত নিয়ে কাজ করে চলছে।
সংযোগের শীতবস্ত্র ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে। মানুষের কাছ থেকে শীতবস্ত্র সংগ্রহ করে সেগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয়ার জন্য সংযোগের কাছে প্রায় দুইশত ভলান্টিয়ার। এর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার শীত বস্ত্র পৌঁছে গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। যার মধ্যে আছে ২৫০০ নতুন কম্বল আর ৩৫০০ বিভিন্ন বয়সের মানুষের শীতবস্ত্র।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নীলফামারি জেলার ডিমলা, রংপুর জেলার নুরপুর, মহাদেবপুর,স্টেশন কলোনি, আদর্শপাড়া, পাঠগ্রাম, গুপ্তপাড়া, কামাড় পাড়া,বাবুখা, মধ্যম বাবুখা, নোয়াখালির হাতিয়া, পঞ্চগড়ের দেবিগঞ্জ আর তেতুলিয়া, দিনাজপুরের কাহারোল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী, ফেনীর ফুলগাজী, মেহেরপুরের সদর ও গাংনী, কুড়িগ্রামের চিলমারি, নেত্রকোনার বারহাট্টাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক, মৃৎশিল্পী, তাঁতশিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশাল হতদরিদ্র মানুষের মাঝে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। এছাড়া বান্দরবান, রাংগামাটির বম, মুরং, খুমি আদিবাসীদের কাছে শীতবস্ত্র পৌঁছে দেয়ার কাজও হাতে নিয়েছে সংগঠনটি।
সংযোগের শীতবস্ত্র সংযোগ কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে সংযোগের তারান্নুম মিথিলা, মেহেদি হাসান, নাজির হোসেন, প্রবাসী বুয়েট প্রকৌশলী মিশকাত আল আলভি, সংযোগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইলা।
শীতবস্ত্র বিতরণ প্রসঙ্গে সংযোগের সিরাজগঞ্জ জেলার স্বেচ্ছাসেবী সায়মন আহমেদ জানান, করোনার অভিঘাতে আমার জেলার তাঁত ও মৃৎশিল্পীরা কষ্টে আছে। এর সাথে দিনে দিনে শীতের প্রকোপ বাড়ছে। সংযোগের শীতবস্ত্র ব্যাংক থেকে সিরাজগঞ্জের তাঁত ও মৃৎশিল্পীদের মধ্যে বিশেষত প্রবীণদের জন্য আমরা শীতের কম্বল বিতরণ করেছি। এ প্রসঙ্গে সংযোগের আরেক স্বেচ্ছাসেবী প্রকৌশলী দাইয়ান নাফিস বলেন, শীতার্ত, গরিব মানুষের কাছে আমরা উষ্ণতা পৌঁছে দিতে চাই। আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন বাংলাদেশের কোন মানুষ শীতে থরথর করে কাঁপবে না। কষ্ট পাবে না। আর সে কারণেই আমাদের শীতবস্ত্র ব্যাংকের যাত্রা। দেশজুড়ে শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ।
‘সংযোগ : কানেক্টিং পিপল’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকৌশলী আহমেদ জাভেদ জামাল জানান, সংযোগ মূলত করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাড়ানোর একটা প্লাটফর্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে। মূলত দাতা ও গ্রহিতার মেলবন্ধনের কাজ করছে উদ্যোগটি। সংযোগের ত্রিশ হাজার ফেসবুক সদস্যের পরিবারে প্রতিদিনই ডাক্তার, শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের নানা ধরনের চাহিদার বা সমস্যার কথা জানান। আমরা সেগুলো নিয়ে সংযোগসহ বিভিন্ন প্লাটফর্ম ও প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ সমন্বয় ঘটিয়ে সমাধানের চেষ্টা করি। শীতবস্ত্র ব্যাংক প্রতিষ্ঠার এ উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতেই এই শীতবস্ত্র ব্যাংক তৈরি করেছি। সারা দেশে প্রতিটি জেলায় আমাদের এ উদ্যোগকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে চলেছি।